ওবিসি মামলার নতুন রায়, বাতিল হলো সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট।

ওবিসি মামলাকে কেন্দ্র করে নতুন রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। যার জেরে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী একগুচ্ছ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল বাতিল হলো। কিন্তু কি বলা হয়েছে এই রায়ে? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আজকের এই প্রতিবেদনে। সুতরাং, কলকাতা হাইকোর্টের ওবিসি মামলা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানতে গেলে অবশ্যই চোখ রাখুন আজকের এই প্রতিবেদনে।

ওবিসি মামলার পটভূমি:-
২০১০ সালের পরবর্তী সময়ের ওবিসি শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এক জনস্বার্থ মামলায়। আর এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় রাজ্যের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন যে, ২০১০ সালের পর থেকে ওবিসি তালিকাভুক্ত ৭৭টি সম্প্রদায়ের মধ্যে অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যা সংবিধানের নীতিকে অবমাননা করছে। আর এই মামলার ফলস্বরূপ ২০২৪ সালের ২২ শে মে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে জানানো হয় যে, ২০১০ সাল থেকে শুরু করে তৎকালীন সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা প্রায় পাঁচ লক্ষের অধিক ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে এবং এই সমস্ত সার্টিফিকেটগুলি চাকরি ক্ষেত্রে বা শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

আদালতের নতুন রায়:-
ইতিপূর্বে ৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করার রায় দেওয়া হলেও এই রায়ের সূত্র ধরে পরবর্তীতে পুনরায় ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত মামলা উঠেছিল আদালতের কাঠগড়ায়। যদিও তাতে আদালতের রায়ের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি এবং মামলার নিষ্পত্তির সাথে সাথেই আদালতের তরফে সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, ২০১০ সালের পরবর্তীতে যেসমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেটগুলি জারি করা হয়েছে তা অবৈধ রূপে গণনা করা হবে। যদিও ২০১০ সালে পূর্ববর্তী সময়ের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেটকে বৈধ বলেই গণনা করা হবে বলেই জানানো হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:- নতুন আবেদনকারীরা কবে থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের অনুদান পাবেন, জেনে নিন এখনই।

সাধারণ মানুষের জীবনে এই রায়ের প্রভাব:-
কলকাতা হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ শিক্ষাক্ষেত্রে কিংবা চাকরিক্ষেত্রে অথবা অন্যান্য আবশ্যক ক্ষেত্রগুলিতে ওবিসি সংরক্ষণের জন্য ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করার সুবিধা পাবেন না। এমনকি যেসমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এতোদিন পর্যন্ত ওবিসি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে এসেছেন তারাও এই সার্টিফিকেট আর কোনোমতে ব্যবহার করতে পারবেন না বলেই জানানো হয়েছে আদালতের তরফে।

যদিও সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আদালতের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, যেসমস্ত নাগরিকরা ইতিমধ্যেই ওবিসি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে শিক্ষা ক্ষেত্রে কিংবা চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন, এমনকি যারা বর্তমানে কোনো কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত কিংবা সরকারি অথবা বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত তাদের স্থান অপরিবর্তিত থাকবে। তবে তারাও ভবিষ্যতে এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন না।

ওবিসি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজ্যের জনগণ থেকে শুরু করে বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে ওবিসি তালিকায় যেসমস্ত জাতি গোষ্ঠীগুলির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা মোটেই ভারতীয় সংবিধানে প্রযোজ্য শর্তাবলী মেনে করা হয়নি, যদিও অনেকেই এই মতের বিরোধিতা করছেন। তবে আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড়সড় প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করছেন রাজনৈতিক মহলের কর্মকর্তারা।

Leave a Comment