কত টাকা ইনকাম করলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে, জেনে নিন এখনই।

ভারতীয় কর ব্যবস্থা এবং কর প্রদান নিয়ে বরাবর ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন রয়ে যায়। আর এক্ষেত্রে মূল যে প্রশ্নটি রয়েছে তা হল, আয় যদি করযোগ্য সীমার নিচে হয় তবে কি আইটিআর বা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে? আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে নূন্যতম আয় কত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হয় তা সংক্রান্ত নানাবিধ তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।

ভারতীয় কর ব্যবস্থা অনুসারে, একজন ব্যক্তি ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করবেন কিনা এবং ঠিক কত টাকার ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে তার আয় কত তার উপরে। মূলত মৌলিক আয়ের সীমা ছাড়ানোর পরই একজন ব্যক্তিকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হয়। মৌলিক আয়ের প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, এটি সাধারণত বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক দ্বারা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এবং নতুন ও পুরোনো কর উভয় কর ব্যবস্থাতেই মৌলিক আয়ের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন।

চলুন তবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করার জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম আয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:- পুরাতন কর ব্যবস্থায় সাধারণত ৬০ বছরের কমবয়সী ব্যক্তিদের আয় ২.৫ লক্ষ টাকার উপরে হলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হয়। অন্যদিকে, ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের অর্থাৎ প্রবীণ নাগরিকদের আয় ৩ লক্ষ টাকার উপরে হলে আইটিআর দাখিল করতে হয়। আবার, ৮০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের আয় ৫ লক্ষ টাকার উপরে হলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

আরও খবর পড়ুন:- ২৪ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার।

যদিও নতুন কর ব্যবস্থার অধীনে সমগ্র দেশের সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, সমগ্র দেশব্যাপী যে সমস্ত ব্যক্তির আয় ৩ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি তাদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে, ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সংশোধিত নতুন কর ব্যবস্থার আওতায় ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করার ক্ষেত্রে মৌলিক আয়ের এই সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং তা ৪ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি যে, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে মৌলিক আয়ের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তার তুলনায় কম আয় হলেও আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হতে পারে, কিন্তু তা কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। আর সেগুলি হলো:-

১. কোনো বছরে যদি আপনার কোনো সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি টাকা জমা থাকে তবে আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে।

২. কোনো চলতি অ্যাকাউন্টে যদি ১ কোটি টাকার বেশি জমা থাকে তবে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে। যদিও এটি ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

৩. বার্ষিক টার্নওভার ৬০ লক্ষ টাকার বেশি হলে নাগরিকদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে। যদিও এই নিয়ম ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

৪. কোনো নির্দিষ্ট পেশায় নিযুক্ত কোনো নাগরিকের আয় যদি ১০ লক্ষ টাকার থেকে বেশি হয়ে থাকে তবে তাকেও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে।

৫. কোনো ভারতীয় নাগরিক যদি এক বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে থাকেন তবে উক্ত নাগরিককে আইটিআর দাখিল করতে হবে।

৬. ২৫,০০০ টাকা বা তার বেশি টাকার টিডিএস/টিসিএস ছাড় পেলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যদিও প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

৭. বিদেশি সম্পদ কিংবা বিদেশি অ্যাকাউন্টের উপভোক্তাদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

৮. কোনো ব্যক্তি যদি নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকার বেশি টাকা ব্যয় করে থাকে তবে তাকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা করতে হবে।

আইটিআর দাখিল করার সুবিধা:- ভারতীয় কর ব্যবস্থা অনুসারে আয়কর রিটার্ন দাখিল করলে টিডিএস ফেরত দাবি করা, মূলধনের ক্ষতি বহন করার মতো সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ব্যাংক লোন কিংবা অন্য যেকোনো প্রকার লোন অথবা ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণপত্র রূপে ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ দাখিল করার মাধ্যমে আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রেও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন -এর জুড়ি মেলা ভার।

Leave a Comment