ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করলো রাজ্য সরকার

সমগ্র রাজ্যজুড়ে যেকোনো ধরনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি। কিন্তু বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে থেকে নানাবিধ অভিযোগ উঠে এসেছে। আর তাতেই রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন। যার জেরে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গব্যাপী ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত নিয়মাবলীতে বড়সড় পরিবর্তন করা হবে বলেই জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে, শুধু তাই নয়, ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এক নতুন নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। চলুন তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত নিয়মে কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

সমগ্র রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের যেকোনোরকম ব্যবসার মূল ভিত্তি প্রস্তর হল ট্রেড লাইসেন্স। আর এই ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করার ক্ষেত্রে নানা রকম বিষয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে থেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক করের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থ চার্জ করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ। আর ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত এই সমস্ত অভিযোগকে কেন্দ্র করেই রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের এক প্রশাসনিক বৈঠকে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত কর ধার্য করা হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন যে, পৌরসভা কিংবা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ কোনো এলাকাতেই ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক করের তুলনাই বেশি অর্থ চার্জ করা যাবে না। তবে শুধু তাই নয়, ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত কর ধার্য করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে এবং সমগ্র বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:- আপনার রিজার্ভ সিট কেউ দখল করেছে? মাত্র 2 মিনিটেই অভিযোগ পৌঁছে যাবে ভারতীয় রেলের কাছে।

পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের তরফে জারি করা এই বিশেষ নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স একটি অত্যাবশ্যকীয় নথি, কিন্তু রাজ্যের পৌরসভা গুলিতে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়ে থাকে এখন থেকে তা আর নেওয়া হবে না। অর্থাৎ এবার থেকে ট্রেড লাইসেন্স জারি করার ক্ষেত্রে কোনরকম অতিরিক্ত অর্থ নেবে না পৌরসভাগুলি এবং রাজ্যের যেকোনো ক্ষেত্রেই ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের জন্য একই পরিমাণ কর চার্জ করা হবে। এর পাশাপাশি আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী দিনে ট্রেড লাইসেন্স এর রিনিউয়াল -এর ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ পৌরসভার আওতায় ট্রেড লাইসেন্স এর আবেদনের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত করের বাইরে কোনোরকম অতিরিক্ত কর দিতে হবে না।

শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি এই বিজ্ঞপ্তিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট, হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট এবং কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স -এর আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কত টাকা নেওয়া যেতে পারে এবং কোন পৌরসভার ক্ষেত্রে কত টাকা চার্জ করা যেতে পারে তা সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় উল্লেখিত তথ্য অনুসারে, পুরসভা, নোটিফায়েড এরিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ এলাকার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স বানানোর জন্য কর হিসেবে এক বছরে সর্বাধিক দেড় হাজার টাকা নিতে পারে।

অন্যদিকে কলকাতা, হাওড়া, আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর, শিলিগুড়ি এবং দুর্গাপুর পুরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনের ক্ষেত্রে কর হিসেবে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা নেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুরোনো ট্রেড লাইসেন্স রিনিউয়ালের ক্ষেত্রেও কোনোরকম অতিরিক্ত ফি নেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যেই এই নোটিশ সমস্ত পৌরসভা গুলিতে পাঠানো হয়েছে, ফলত আগামীদিনে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আর কোনোরকম অভিযোগের জায়গা থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আনার পর থেকেই রীতিমতো স্বস্তি পেয়েছেন রাজ্যের সমস্ত ব্যবসায়ীরা, তবে শুধু ব্যবসায়ী নয় সমগ্র রাজ্যে সাধারণ জনগণের কাছে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

Leave a Comment